মিয়ানমারের ছোড়া মর্টার শেল বাংলাদেশের ভূখণ্ডে পড়ার ঘটনায় পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন বলেছেন, বিষয়টিকে আক্রমণ হিসেবে দেখছে না, বরং দুর্ঘটনা হিসেবে দেখছে বাংলাদেশ। এ ধরনের ঘটনায় আগেও মিয়ানমারকে বার্তা দেওয়া হয়েছে। এবারও কঠোর বার্তা দেওয়া হবে।
রোববার সন্ধ্যায় এই কথা বলেন তিনি। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সূত্র জানায়, গত জুন-জুলাই থেকে দেশটির সামরিক বাহিনী দক্ষিণ-পূর্ব কায়াহ এবং কাইন ও উত্তর-পশ্চিম চীন রাজ্যে সামরিক অভিযান চালিয়ে যাচ্ছে। সেখানকার গ্রাম ও আবাসিক এলাকায় বিমান দিয়ে গোলাবর্ষণ তীব্র করছে দেশটির সেনাবাহিনী।
সূত্র আরও জানায়, একই সঙ্গে রাখাইনেও আরাকান আর্মির সঙ্গে তীব্র যুদ্ধ চলছে। সেখানে বাকি থাকা রোহিঙ্গাদেরও এ যুদ্ধের মাঝে টেনে আনা হচ্ছে। সেই সঙ্গে রোহিঙ্গা নয় এবং বৌদ্ধ ধর্মালম্বীর মানুষসহ অন্যান্য ধর্মের মানুষদেরও লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করছে দেশটির সেনাবাহিনী। ফলে বিষয়টি ভাবিয়ে তুলেছে বাংলাদেশকে।
এ বিষয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা নাম না প্রকাশের শর্তে বলেন, মিয়ানমার তার পশ্চিমের বিভিন্ন অংশে যেভাবে সামরিক অভিযান চালাচ্ছে, তা সেখানে থাকা মানুষগুলোকে রোহিঙ্গাদের মতো আশপাশের দেশগুলোতে পালাতে আবারও বাধ্য করবে। এখন সেখানে রোহিঙ্গার সংখ্যা খুবই কম। বাংলাদেশ এ ক্ষেত্রে মিয়ানমারের অন্য জাতিগোষ্ঠীর অনুপ্রবেশ আশঙ্কা করছে। এ কারণে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশকে (বিজিবি) নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে যাতে কঠোর নজরদারি করে। একজন মানুষও যাতে সীমান্ত পার না হতে পারে, সেই নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে বিজিবিকে।
তিনি বলেন, ইতোমধ্যে যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশ থেকে রোহিঙ্গা পুনর্বাসনের ঘোষণা দিয়ে মিয়ানমারের থাকা রোহিঙ্গাদেরও উৎসাহিত করেছে মিয়ানমার ছেড়ে বের হয়ে আসতে। দেখা যাবে রোহিঙ্গাদের পাশাপাশি অন্যান্য জাতিগোষ্ঠীর মানুষও এ সুযোগ নেওয়ার জন্য প্রতিবেশী দেশগুলোতে অনুপ্রবেশের চেষ্টা করবে। কিছু ক্ষেত্রে হয়ত অনেক বাংলাদেশিও নিজেদের রোহিঙ্গা পরিচয় দিয়ে এ সুযোগ নেওয়ার চেষ্টা করবে।
বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের সীমান্ত রয়েছে প্রায় ২৭১ কিলোমিটার। এর মধ্যে ৫৪ কিলোমিটার জল সীমান্ত। দুই দেশের স্থল সীমান্তের প্রায় অনেক অংশই ইতিমধ্যে কাঁটাতারের বেড়া নির্মাণ করেছে মিয়ানমার। বাংলাদেশে প্রায় সব রোহিঙ্গা পাঠিয়ে দিয়ে সেই বেড়া মেরামতও করেছে দেশটি।
এ সীমান্ত দিয়ে অবৈধ অনুপ্রবেশ রোধ, মাদকদ্রব্যসহ অন্যান্য চোরাচালান প্রতিরোধ, বিভিন্ন প্রকার সীমান্ত অপরাধ দমন এবং দেশের অভ্যন্তরীণ আইন-শঙ্খলা রক্ষায় প্রাথমিকভাবে মিয়ানমারের সীমান্ত এলাকায় শাহপরীর দ্বীপ থেকে ২৭১ কিলোমিটার রিং রোডসহ কাটাঁতারের বেড়া নির্মাণের পরিকল্পনা নেয় বাংলাদেশ। তবে বেড়া এখনো নির্মাণ করা হয়নি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে পররাষ্ট্র মন্ত্রণলয়ের ওই কর্মকর্তা বলেন, প্রকল্প নেওয়া হয়েছে ঠিকই তবে এর বাস্তবায়ন এখনো হয়নি। সেখানে এখনো একটি ইটও গাঁথা হয়নি।
প্রসঙ্গত, আজ বিকেলে ৩টার দিকে মিয়ানমার থেকে ছোড়া দুটি মর্টারশেল বাংলাদেশ-মিয়ানমার জিরো পয়েন্ট সংলগ্ন বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ির ঘুমধুম এলাকার জনবসতিতে পড়ে। তবে সেগুলো বিস্ফোরিত হয়নি। হতাহতের ঘটনাও ঘটেনি
পাঠকের মতামত